মৃত্যু, কেবল মৃত্যুই ধ্রুব সখা, যাতনা, শুধুই যাতনা সুচির সাথী।
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যের গঠনরীতি ধ্রুপদী। তার বিভিন্ন কাব্যের বিষণ্ণ-বিধুর যন্ত্রণাময় প্রেমের কবিতাগুলো তীব্র নাটকীয়তায় মণ্ডিত। সেই সঙ্গে আছে সংগীতের প্রতি তুলনা, কবির ভাষায়- 'Various verseforms'। তাছাড়াও আছে ছন্দগত বৈচিত্র্য।
অর্কেস্ট্রা কাব্যগ্রন্থের অর্কেস্ট্রা কবিতায় এক দিনের সাত প্রহরব্যাপী যে অভিজ্ঞতা ভাষারূপপ্রাপ্ত এক কথায় তা সমগ্র গ্রন্থের নির্যাস। বিদেশিনি প্রিয়া, চারণবায়ুর কথকতা, সৃজন-প্রলয় একাকার করা মিলনলগ্ন এবং অতঃপর প্রিয়ার বিগত জীবনের সংবাদে মরুগ্রস্ত কবি হৃদয় হাহাকার ও লুণ্ঠিস্তক প্রেমিকা এই ভাবানুষঙ্গ রঙ্গালয়ের দৃশ্য ও শ্রুত, সংগীতের সিম্ফনি সহযোগে সমন্বিত। তবে সবই স্মৃতিগ্রথিত তাই অনুষ্ঠান সমাপ্তিতে স্বপ্নভঙ্গ এবং অন্তরের ক্ষুব্ধ হাহাকার উচ্চকিত। যেমন,
"মৃত্যু, কেবল মৃত্যুই ধ্রুব সখা,
যাতনা, শুধুই যাতনা সুচির সাথী।"
অর্কেস্ট্রা কবিতায় পুরো স্থান জুড়ে জীবনের প্রাপ্তিকে পৌছে কবির বিদেশিনি প্রিয়ার সংসর্গ লাভ ও ভালোবাসার কথা কাব্যভাষায় উপস্থাপিত করেছেন। অর্কেস্ট্রা কবিতাটি তার বহুমাত্রিক প্রেমের কবিতার মধ্যে অন্যতম। অর্কেস্ট্রা মূলত প্রেমকাব্য, কাব্যের প্রথম কবিতার নাম হৈমন্তী এবং শেষ কবিতার নাম অর্কেস্ট্রা। রোমান্টিক কবিদের মতো সুধীন্দ্রনাথ দত্তও নারী সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন- যার প্রমাণ 'অর্কেস্টা' কবিতায় উপস্থাপিত। যেমন,
"কুন্তলে তব শরৎসাঁঝের ঋদ্ধি;
পাকা দ্রাক্ষার মদির কান্তি অঙ্গে;
উরসে তোমার মর সাধনার সিদ্ধি;
ধরা রূপবতী, যে তোমারই অনুষঙ্গে।”