অমরাবতী দৈব প্রাচীর চুরমার হল মর্তলোকেই। ধূমকেতু এই বিরাটদাহন বিশ্ব আমার তোমার চোখেই পেয়েছিল তার পরম গতি।- ব্যাখ্যা কর।

আলোচ্য অংশটুকু ত্রিশোত্তর ধারার কবি বিষ্ণু দে'র চোরাবালি কাব্যের অন্তর্গত ওফেলিয়া নামক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে। এ কবিতায় কবি ইউরোপীয় নারীকে নিয়ে এসেছেন- যাকে বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে দোষারোপ করা হয়েছে। তবে বিষ্ণু দে তার ভাবনা-বেদনাকে ব্যক্তিনিরপেক্ষ রূপ দিয়েছেন হ্যামলেটের মধ্যবর্তায়। ওফেলিয়া কবিতায় কবি ব্যক্তিগত বিরহবোধ আশা-নিরাশা ও প্রেম বেদনাকে যুগ-যন্ত্রণা হিসেবে অঙ্কিত করেছেন।

বিশ্বাসভঙ্গের প্রতীকরূপে ওফেলিয়াকে চিহ্নিত করা হয়। হ্যামলেট জানে তার মুক্তি প্রেমের মধ্যেই কিন্তু সে প্রেম অপ্রাপণীয়। এজন্যই মাঝে মাঝে হ্যামলেটের চোখে ভেসে উঠেছে তার প্রেমের বেদনা মুক্তিদায়িনী ঐশ্বর্যময় রূপের চিত্র। তার কিছুক্ষণ পরেই ব্যাকুলিত সন্দেহ ও শোকের ব্যথায় তা চূর্নীভূত হয়েছে। কবির আশা ও বিষণ্ণতার মধ্যেও উর্ধ্বগতি ও উজ্জবনী প্রতিপত্তি লাভ করেন। যার মধ্য দিয়ে এ কবিতার নায়কদের পরিপূর্ণ স্বীয় নান্দনিকতায় কবি সম্পূর্ণতা অর্পণ করে তাদের আধুনিক মানবসভ্যতার উত্তরণ ঘটিয়েছেন। তাইতো কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়- 

'অমরাবতীর দৈব প্রাচীর চুরমার হলো মর্ত্যলোকেই। ধুমকেতু এই বিরাটদাহন বিশ্ব আমারতোমার চোখেই পেয়েছিল তার পরম গতি।'

শেষ কয়টি চরণে আশা ও নিরাশা, প্রেম ও বেদনা, সার্বভৌম আবেদন ও কবির ব্যক্তিগত ভাবনা চেতনা সমন্বিত হয়ে এক অভিনব সিদ্ধির শিখরে পৌছেছে। এ কবিতায় হ্যামলেট ও ওফেলিয়াকে যথাক্রমে প্রাচ্য পুরাণ নায়ক-নায়িকা কচ ও দেবযানীর সঙ্গে সাদৃশ্যে ব্যর্থ প্রেমের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। কচ এবং দেবযানী উভয়েই পিতৃঋণে ব্যাপৃত বলে প্রেমের যোগ্য সম্মান দিতে অসমর্থ হয়েছে।

এ কারণেই দেবযানী দিয়েছে অভিশাপ আর ওফেলিয়া ব্যর্থ জীবনে ফেলেছে দীর্ঘনিশ্বাস।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিষ্ণু দে তার ওফেলিয়া কবিতায় আধুনিক যুগের প্রেমের স্বরূপ তুলে ধরেছেন বিপরীত সত্তার মাধ্যমে।

আপনারঅদৃশ্যমন্তব্য
Cancel