আমি দেখেছি তারে- হ'লোই বা শুধু একবার সোনার টেউয়ের মতো তার কেশের উচ্ছ্বাস। -ব্যাখ্যা কর।
আলোচ্য অংশটুকু বুদ্ধদেব বসু বিরচিত কঙ্কাবতী কাব্যের কখনো নামক কবিতা থেকে আলোচনা করা হয়েছে। এ কবিতায় বুদ্ধদেব বসু নায়িকার কেশরাশির বর্ণনা দিতে গিয়ে চুলের নানা রঙের পরিচয় দিয়েছেন। যেমন- 'রেশমি নরম লাল', 'হাল্কা হলুদ লাল', 'সোনালী লাল', 'আলতা লালচে' ইত্যাদি। কবি বর্ণনা করেছেন এইভাবে-
"কঙ্কাবতী সে চুল এলো করে দিয়েছে-
আহা-লালচুল, রেশমি নরম, লালচে চুল,
আহা লাল চুল, হালকা, হলুদ-লালচে চুল।"
প্রিয়ার কেশরাশি শুধু কবির সৌন্দর্য-পিপাসাতৃপ্ত করে না, তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় এক রহস্যলোকে। তাইতো কবির বর্ণনায়-
'আমিতো দেখেছি তারে হ'লোই বা শুধু একবার সোনার ঢেউয়ের মতো তার সেই কেশের উচ্ছ্বাস'
নায়িকার কেশরাশির বর্ণনায় জীবনানন্দের সঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর সাযুজ্য কিছুটা লক্ষ করা যায়। কেননা জীবনানন্দ তার 'বনলতা সেন' কবিতায় নায়িকার চুলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, 'চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা/মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য' তারই প্রতিধ্বনি যেন আমরা বুদ্ধদেব বসুর কখনো কবিতায় শুনতে পাই। নারীদের মূল উপাদান করে কবিতা লেখার প্রেরণা শুধু বাংলা সাহিত্যে নয় বুদ্ধদেব বসুর কবিতায়ও প্রতীয়মান।
এ কবিতায় কবি রাত, ভোের, দুপুর, বিকেল, গোধূলি গড়িয়ে রাতের আঁধার আবার নেমে এলেও কবি সেই ভালো লাগায়ই নিবৃত্ত হয়েছেন। কখনো কখনো কবির কাছে মনে হয় এই বুঝি নিশার স্বপ্ন কখনো তা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে, তাইতো ভবিষ্যতের চিন্তায় কবি বিভোর হয়ে থাকেন- যদি তার প্রিয়তমা না আসে- ভালো না বাসে? ভবিষ্যতের চিন্তা কবিকে অস্থির করলেও প্রিয়তমার ভালোবাসা নিয়েই তিনি বেঁচে থাকতে চান।
পরিশেষে বলা যায় যে, কখনো কবিতাটি প্রিয়ার প্রতি কবির মন্ত্রমুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ কবিতায় কবির ভালোবাসা ও ভালোলাগার দিকগুলো উন্মোচিত হয়েছে।